কৃত্রিম উপগ্রহ হলো এক ধরনের মহাশুন্যযান যা পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য অথবা কোনো গ্রহের চারদিকে আবর্তন করে। এই উপগ্রহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন টেলিফোন, রেডিও, টিভি সঙ্কেতকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে এই উপগ্রহ ব্যবহৃত হয়। গোয়েন্দাগিরি, গবেষনা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, মহাকাশ গবেষনা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে এর ব্যবহার রয়েছে। আমরা এখানে মহাকাশ গবেষনা তথা জ্যোতির্বিদীয় অনুসন্ধানে কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবো।

আমরা জানি যে, মহাকাশের খ-বস্তুর দ্বারা নিঃসৃত তাড়িতচৌম্বক বর্নালির তরঙ্গদৈর্ঘ্যর সমগ্র পাল্লা জুরে থাকে। এই বিকিরন প্রধান অংশ হয় বায়ুমন্ডল দ্বারা শোষিত বা প্রতিফলিত হয়। ফলে পৃথিবী শুধু দৃশ্যমান বিকিরন ও রেডিও তরঙ্গের সামান্য পরিমান গ্রহন করে। এই মহাশুন্য প্রোব (space probe) বা মহাশুন্য অনুসন্ধানী অপটিকাল ও রেডিও টেলিস্কোপ ছাড়াও মহাবিশ্ব অনুসন্ধানের জন্য ব্যবহৃত সকল রকম কৌশল অবলম্বন করে। মহাশুন্য অনুসন্ধানের অন্যতম পদ্ধতি হলো কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার। কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপর গিয়ে খ বস্তু পর্যবেক্ষন ও অনুসন্ধান করা যায়। কৃত্রিম উপগ্রহ আসার ফলে বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা টেলিস্কোপ কক্ষপথে স্থাপন করে তারিতচৌম্বক বর্নালির এক্সের ও অতিবেগুনি অন্ঞ্চলের পর্যবেক্ষন চালানো যায়। এ ধরনের টেলিস্কোপের অন্যতম হচ্ছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope,HST)। ১৯৯০ সালের এপ্রিল মাসে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এরোনেটিক্স এন্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (National Aeronautics and Space Administration, NASA) বিঙ্গানিরা বায়ুমন্ডলের বাইরে কৃত্রিম উপগ্রহে এই টেলিস্কোপটি স্থাপন করেন। জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী এডউইন হাবলের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এর নাম করা হয় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ।  বিশাল আকৃতির এই টেলিস্কোপে রয়েছে 2.4m এবং 0.3m ব্যাসের দুটি দর্পণ। উৎক্ষেপনের পর একটি দর্পনের ত্রুটি ধরা পড়ে। ত্রুটি সংশোধনের পর ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর থেকে আজ অবধি শ্বাসরুদ্ধকর সব চিত্র পাঠিয়ে চলেছে HST। এসব চিত্র বিশ্লেষন করে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্ব সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারছেন যা সৃষ্টিতত্ত্বের রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। HST যুক্তরাষ্ট্রের NASA কতৃক উৎক্ষেপিত হলেও বিশ্বের যেকোনো স্থানের গবেষকরা এই টেলিস্কোপ থেকে প্রেরিত তথ্য ব্যবহার করতে পারেন।

অতি সম্প্রতি ২০১৬ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি NASA হাবল টেলিস্কোপের পাঠানো পৃথিবী থেকে প্রায় ত্রিশ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সির চিত্র প্রকাশ করে। চিত্র বিশ্লেষন করে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন সেখানে দুই বা ততোধিক গ্যালাক্সি একীভূত হয়ে একটি নতুন গ্যালাক্সিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।

সম্পূর্ণভাবে সৌরশক্তি চালিত হাবল টেলিস্কোপের কর্মক্ষমতা প্রায় শেষ হওয়ার পথে। HST এর বিকল্প হিসেবে জেমস্ ওয়েব টেলিস্কোপ (James Webb Telescope) নামে নতুন একটি আরো উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ টেলিস্কোপ ২০২০ সাল নাগাদ মহাশূন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।