Ringworm / Dermatophysis symptoms and cure
Ringworm / Dermatophysis symptoms and cure


দাদ সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। কারন এটা যে কতটা যন্ত্রণার বা লজ্জাজনক তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আজ এই রোগের বিষয়ে এবং এর প্রতিকার-প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

দাদ রোগ একটি ছোয়াচে রোগ। এবং একটি মারাত্তক চর্মরোগ। এই রোগটি উষ্ণতা এবং আদ্রতাপূর্ণ পরিবেশে খুব ভালো বিস্তার করতে পারে। আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় সব অন্ঞ্চলেই এরোগের বিশাল আকারে বিস্তার দেখা যায়। এই রোগটিকে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। সংস্কৃত ভাষায় একে দদ্রুরোগ আর ইংরেজি ভাষায় একে রিং ওয়ার্ম (Ringworm) হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়ে থাকে। ইংরেজিতে রিং ওয়ার্ম বলা হলেও এটি কিন্তু কোনো ধরনের ওয়ার্ম দ্বারা সংঘটিত হয়না। এই রোগটি যেকোনো বয়সের লোকদের মাঝেই সংক্রমিত হতে পারে। তবে অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েরাই অধিক আকারে সংক্রমিত হয়। যেসব যায়গায় অধিক সংখ্যক ছেলে মেয়ে একসাথে বসবাস করে তাদের মাঝে এর সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। যেমনঃ হাসপাতাল থেকে শুরু করে  এয়াতিম খানা গুলোতে এই দাদরোগটি খুব ভালো বিস্তার করতে পারে।

দাদরোগের কারনঃ

ছত্রাক দ্বারা এই রোগ সংঘটিত হয়। পরজীবি উদ্ভিদ দ্বারা সংক্রমনের কারনে একে চিকিৎসকগন tinia নামে ডাকা হয়। এই রোগের কারন হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই Trichophyton (T. rubrum, T. verrucosum) নামক ছত্রাককে দোষ দেয়া হয়। আর এজন্যই দাদরোগকে tinia trichophytina or trichophytosis নামে অভিহিত করা হয়। তাছাড়াও Microsporum (M. canis), Epidermophyton(E. floccusum) গণের ছত্রাক থেকেও দাদরোগ হয়ে থাকে।

সংক্রমনঃ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘামে বেশিক্ষন ভিজে থাকা শরীর, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন শরীর এবং শরীরে ক্ষতস্থান আছে এমন শরীরে খুব সহজেই দাদরোগের ছত্রাক স্পোর বা হাইফা দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই রোগটির জীবানুর সুপ্তিকাল প্রায় ৩-৫ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই কয়দিন পর রোগটিকে উপলব্ধি করা যায়। এটি শরীরের যেকোনো যায়গায় আক্রমন করতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষত্রেই মুখমন্ডলে, হাতে, মাথার খুলি এবং উরুতে এটির সংক্রমন হয়। যদি কখনো মাথার খুলিতে হয়ে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই মারাত্তক হয়। এর নামকরনটা মাঝে মাঝে ডাক্তাররা এর আক্রান্ত স্থান অনুসারে করে থাকে।

দাদ রোগের লক্ষনঃ

  • ​প্রথম অবস্থায় আক্রান্তের জায়গায় ছোট আকৃতির লাল গোটা হয় আর একটু করে চুলকায়।
  • ​এর পর আক্রান্তের স্থানে বাদামি বর্নের আইশ এর মতো কিছু দেখা যায় এবং বৃত্তাকার আকৃতি ধারন করে।
  • ​পর্বর্তিতে সুনির্দিষ্ট কোনা সহ এটি আস্তে  আস্তে বৃত্তাকার আকৃতি বৃদ্ধি করে আর মাঝখানের জায়গা সাধারন দেখায়। এবং প্রচুর পরিমানে চুলকাতে থাকে।
  • ​অনেক চুলকানোর ফলে আক্রান্ত স্থানে প্রচুর পরিমানে জ্বালা করে এবং আঠালো প্রকৃতির রস বেরোতে দেখা যায়।
  • ​মথায় যদি হয়ে থাকে তাহলে যায়গাটুকুতে চুল উঠতে থাকে, নখের মাঝে হলে রং বদলিয়ে খন্ডাকৃতির হয়ে ভেঙ্গে যায়।
  • ​দাদ এর আক্রান্ত স্থানে মাঝে মাঝেই রিং এর আকার দেখা যায়। যার কারনেই মুলত একে রিং ওয়ার্ম বলা হয়।

রোগের বিস্তরনঃ

দাদ রোগ ছোয়াচে হওয়ায় এই রোগটি খুব সহজেই অন্য একজনের দেহে বিস্তার লাভ করে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র ব্যাবহার করলে অতি দ্রুত তা অন্য সু্স্থ দেহে পরিচালিত হয়। এটি পোষা বেড়ালের মাঝেও দেখা যায় এবং এর মাধ্যমেই খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে। খেয়াল রাখবেন ভেজা বা উষ্ণ স্থানে এটি খুব মারাত্তক ভাবে আক্রমন করে।

এবার আসি এর রোগ নিয়ন্ত্রন করা বিষয়ে।

রোগ নিয়ন্ত্রন বা প্রতিকার ব্যবস্থাঃ

  • ​আক্রান্ত জায়গা নিয়মিত এবং খুব ভালোভাবে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা খুব জরুরি।
  • ​আক্রান্ত জায়গার সাথে নিয়মিত এবং সাবধানতা অবলম্বন করে জামাকাপড়, ব্যবহারিক জিনিস এবং বিছানাপত্র পরিষ্কার করতে হবে।
  • ​এমন ধরনের কাপর পড়া থেকে দুরে থাকতে হবে যেগুলো আক্রান্ত স্থানে ঘর্ষনের সৃষ্টি করে।
  • ​ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিফাংগাল ক্রিম অথবা ড্রাই পাউডার আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।
  • ​দাদ রোগে আক্রান্ত পোশা প্রানীদের থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
  • ​মাথায় হলে ন্যাড়া করা খুবই জরুরি। এবং এর সাথে সাথে সেলিসাইলিক এসিডযুক্ত মলম ব্যবহার করাও অনেক জরুরি।
  • ​তাছাড়াও শরীরের অন্যান্য স্থানে হয়ে থাকলে আয়োডিন বা বেনজোয়িক এসিড ব্যবহার করা দরকার।

চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

চিকিৎসক এর পরামর্শ মাঝে মাঝেই নিতে হবে। কারন এটি হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। প্রায় ৩-৪ সপ্তাহের মাঝেই এই রোগটি থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়। আর সাধারনত এর জন্য এন্টিফাঙ্গাল ক্রিম(Terbinafine/Miconazole) ব্যাবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসক গন। মাথায় দাদ হলে এটি অনেকটা বিপদজনক আকার লাভ করতে পারে। আর মলমজাতীয় ঔষধ এর পাশাপাশি খাবার ট্যাবলেট (Griseofulvin/Itraconazole) খেতে হবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দাদে আক্রান্ত স্থান ভালো করে চুলকিয়ে দাদ মর্দন(Cassia alata) গাছের পাতা ব্যবহার করা যায়। আর এতে উপশম হতে প্রায় দু থেকে তিন দিন সময় লাগে। এটি খুব কার্যকর একটি উপায়।

প্রতিরোধ উপায়ঃ

  • ​পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং কখনো ভেজা গায়ে বেশিক্ষন থাকা যাবে না
  • রোগীর ব্যবহার করা জিনিস পত্র পরিষ্কার করতে হবে এবং ব্যবহার করা যাবে না।
  • মাথার চুল কাটার পর মাথা পরিষ্কার এবং শুক্ন রাখা দরকার।
  • পোশা প্রানীর যারা দাদে আক্রান্ত তাদের দেহ থেকে দুরে থাকাটা খুব দরকার।
  • ব্যবহার করা পোশাক পরিচ্ছেদ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।

এই দাদ ভালো না হলে অনেক বড় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ আক্রান্ত স্থানে ফুলে ওঠা, পুজ গরিয়ে পরা এবং জ্বর হওয়া। এরকম পরিস্থিতিতে এন্টিবায়োটিক ঔষধ এর ব্যবহার করা প্রয়োজন।