![]() |
খাদ্যে পুষ্টির অভাব হলে যেসব রোগ হয় |
পরিমিত খাবার না খেলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আর শরীর দুর্বলতার কারনে অনেক মারাত্তক রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধে। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা সুষম খাবার খাচ্ছি কি না। কোন ধরনের পুষ্টিগুন কোন কোন খাবারে আছে সেটাও আমাদের জানতে হবে। কারন এসব পুষ্টিকর খাবার না খেলে এনিমিয়া, স্কার্ভি এবং রিকেট এর মতো অনেক মারাত্তক রোগ হতে পারে।
এবার আমরা জানবো কোন খাবার না খেলে কোন রোগ হয়।
এনিমিয়া
এটা একটা সাধারন এবং মারাত্তক রোগ যা রক্তের মাঝে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কম হলে আক্রামন করে। এই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি অনেক কারনেই হতে পারে। যেমনঃ কোনো কারনে অধিক রক্তপাত ঘটলে রক্তের সাথে হিমোগ্লোবিন এর পরিমানও কমে যায়। তবে সুস্থ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে কিছুদিনের মাঝে হিমোগ্লোবিন এর সংশ্লেষ ঘটে এবং রক্তোত হওয়ার পরও হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা ঠিক থাকে। কিছু খাদ্যে পুষ্টির অভাব থাকে। যার ফলে হিমোগ্লোবিন এর সংশ্লেষ ঘটে না এবং রক্তের মাঝে অবস্থিত লোহিত কনিকা সংশ্লেষনে সমস্যা হয় এবং এনিমিয়া র মতো মারাত্তক রোগ হয়ে যায় যা আপনা আপনি সারতে সক্ষম নয়। আর এনিমিয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে লৌহ জাতীয় খাবার, প্রটিন, ফলিক এসিড(যা ফলের মাঝে থাকে), ভিটামিন সি এবং বি-১২ সম্পন্ন পুষ্টি খাবার। আর এসব পুষ্টি যেসব খাবারে থাকে,
লৌহ জাতীয় খাবারঃ ডিম, কলিজা, বাদাম, ডাল, কচুশাক এবং ছোলা ইত্যাদিতে থাকে।
প্রোটিনঃ গোস্ত, মাছ, কলিজা এবং ডাল এগুলো প্রটিন সমৃদ্ধ।
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খবারঃ সবিজ শাক, কলিজা, মাছ এবং গোস্ত এসব খাবারে ফলিক এসিড থাকে।
ভিটামিন বি-১২ঃ ডিম, কলিজা এবং গোস্তের মাঝে ভিটামিম বি নামক পুষ্টি পাওয়া যায়।
ভিটামিন সিঃ পিয়ারা, আমলকি এবং কমলার মাঝে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাছাড়াও টমেটো এবং সবুজ শাক ও ভিটামিন সি এর উৎস।
আমাদের বাংলাদেশে অধকাংশ মেয়েরাই এই এনিমিয়ায় ভোগেন। কারন বয়ঃসিন্ধকালে খাবারে পরিমিত পুষ্টি পান না। রক্তখয়ের ফলে আরো বেশি মাত্রায় পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন পরে। শিশুদের ক্ষেত্রেও বেশি পরিমানে দুধ পান করলেও এনিমিয়া হয়ে থাকে। এজন্য শিশুদের ছয় মাস বয়স থেকেই মায়ের দুধের পাশাপাশি কিছু পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন।
রাতকানা
বেশিদিন ধরে খাবারে ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে আমরা সকালের তুলনায় রাতে বা অল্প আলোতে কম দেখতে পাই যাকে রাত কানা রোগ বলা হয়। ভিটামিনের অভাব হলে সজিবহীনতা, চোখের মনির মাঝে ঘা এবং পুজ জমা হওয়ার মতো রোগ আক্রমন করে। সবুজ শাকের মাঝে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। আর তাই আমাদের নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের শাক যেমনঃ কচু শাক, লাল শাক, পুই শাক, লাউ শাক ইত্যাদি খাওয়া দরকার। এছাড়াও গাজর, আম, কাঠাল, পেঁপে ইত্যাদিতে ভিটামিন এ বিদ্যমান থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করে প্রতিনিয়ত এরকম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিৎ।
বেরিবেরি
চলার ক্ষমতা না থাকা অর্থাৎ মাঝে মাঝে পা অবশ হয়ে যাওয়াকে বেরিবেরি রোগ বলা হয়। এসময় পা অনেকটা পন্স এর মতো হয় অর্থাৎ টিপ দেলে দেবে যায়। এই রোগটির কারন থায়মিন নামক একধরনের ভিটামিনের অভাব। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে গমের রুটি, ডাল বা বাদাম এ জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তাছাড়াও দুধ, কলিজা বা ছোলা জাতীয় খাবারে এ ধরনের পুষ্টি থাকে।
স্কার্ভি
স্কার্ভি রোগ হয় সাধারনত ভিটামিন সি এর ঘাটতি থাকলে। এই রোগটির ক্ষেত্রে দাত নরবরে হয়, মারি ফুলে যায় বা রক্ত পরে। তাছাড়াও হাত পায়ের গিটগুলোতে ব্যাথা এবং কোনো যায়গায় কেটে গেলে সহজে সারাতে চায়না। ভিটামিন সি থাকে শাকসবজি এবং টক জাতীয় ফল গুলোতে। তাই এগুলো খাওয়া আমাদের জন্য আবশ্যক। যেমনঃ টমেটো, আমলকি, ফুল কপি, বাধা কপি, কাচা মরিচ, লেবু, পয়ারা বা এরকম ধরনের ফলে ভিটামিন সি থাকে। সাধারনত রান্না করার পর অনেক ভিটামিন নষ্ট হয়, এজন্য কাচা ফল খাওয়ার অভ্যাস গরতে হবে।
গলগন্ড
বাংলাদেশের উত্তর অন্ঞ্চলের মহিলাদের মাঝে এরোগ দেখা যায়। কারন আয়োডিন এর অভাব ঘটলেই এই গলগন্ডর মতো জঘন্য রোগ হয়। এজন্য লবনের প্রতি সহনশীলতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা জানি যে সামুদ্রিক প্রানীর মাঝে আয়োডিন থাকে তাও আবার প্রচুর পরিমানে। তাই আমাদের ইলিশ খাওয়া দরকার।
সাধারনত আমাদের শরীরের মাঝে পুষ্টির অভাব হলে এধরনের রোগ হয়ে থাকে, তাই আমাদের নিয়মিত যতটা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
0 Comments